ছোটবেলায় জোক্স শুনতাম একটা ফোন নিয়ে: ফোনটা নাকি মেঝেতে পড়লে মেঝের মার্বেল ফেটে যায় বা রাগ করে কেউ দেওয়ালে ফোন ছুঁড়ে মারলে দেওয়ালের টাইল খসে যায়, অথচ ফোনটা নাকি অক্ষত থাকে। তা যে ফিচার ফোনটিকে নিয়ে এই রসিকতা সেই ৩৩১০ মডেলটির ২০১৭-এর নতুন ভার্সন আর তিনটি অ্যান্ড্রয়েড স্মার্টফোন ভারতে লঞ্চ করার দোরগোড়ায় দাঁড়িয়ে নোকিয়া (পড়ুন এইচ এম ডি গ্লোবাল)। একটু ফ্ল্যাশব্যাকে গেলে দেখা যাবে গুগলের অ্যান্ড্রয়েড প্রযুক্তি বাজারে আসার পর স্যামস্যাং ও অন্যান্য চীনদেশীয় সংস্থাগুলির কঠিন চ্যালেঞ্জের সামনে কার্যত গুঁড়িয়ে যায় নোকিয়ার সাম্রাজ্য। এভাবে বেশ কয়েক বছর লাভের মুখ না দেখে অন্তর্কলহ, কর্মী ছাঁটাই -এর মতো সমস্যায় জেরবার হয়ে মাইক্রোসফ্টের কাছে নিজেদের সমস্ত শেয়ার আর ফ্যাক্টরিগুলি বিক্রি করে বাজার থেকে হারিয়ে যায় ফিনল্যান্ডীয় এই সংস্থা।
তারপর থেকে জল অনেক দূর গড়িয়ে গেছে। “নোকিয়া লুমিয়া” থেকে “মাইক্রোসফ্ট লুমিয়া” হয়েও যখন ছবিটা বদলালো না, তখন থেকেই কানাঘুষো শোনা যেতে লাগল যে নোকিয়া নাকি নিজেদেরকে ঢেলে সাজাচ্ছে দ্বিতীয় রাউন্ডের জন্য। আর এবছর মোবাইল ওয়ার্ল্ড কংগ্রেস ২০১৭ (MWC 2017)-এ যাবতীয় জল্পনায় দাঁড়ি টেনে নোকিয়া ৩৩১০ ২০১৭ এডিসন, নোকিয়া ৩, নোকিয়া ৫ আর নোকিয়া ৬ -এই চারটি ফোন নিয়ে আত্মপ্রকাশ করলো নোকিয়া। আগামী জুলাই মাস থেকেই ভারতে অনলাইন আর অফলাইনে ফোনগুলি পাওয়া যাবে।
দীর্ঘদিনের অবসর ভেঙে ফেরার পরও কি নোকিয়ার ব্র্যান্ড ভ্যালু কি আগের মতোই থাকবে?
নোকিয়া কি পারবে ভারতের বাজারে নতুন করে নিজের জায়গা করে নিতে যেখানে এখন “মেক ইন ইন্ডিয়া” উদ্যোগের উপর ভর করে বাজার মাত করছে শিয়াওমি, কুলপ্যাড, লেইকো, ওপ্পো, ভিভো নামক চীনদেশীয় স্মার্টফোন সংস্থাগুলি?
নেটিজেনদের প্রত্যাশা কি আদৌ পূরণ করে উঠতে পারবে নোকিয়া?
সমস্ত উত্তর খুঁজব শুধুমাত্র bongtech.in এ। আজ প্রথম কিস্তি
নোকিয়ার ফোনের ব্র্যান্ড ভ্যালুর কারণের কথা বলতে গেলেই প্রথম যে কথাটা মাথায় আসে তা হলো বিল্ড কোয়ালিটি। শক্তপোক্ত ফোন, হাত থেকে বেশ কয়েকবার পড়ে গেলেও ভাঙার ভয় নেই। আর ভাঙলেও খুব বেশি হ্যাপা নেই, কারণ নোকিয়ার বিশ্বমানের সাপোর্ট আর সবসময় স্পেয়ার পার্টস-এর যোগান। এর থেকেই জন্ম নেয় নোকিয়ার প্রতি মানুষের অগাধ বিশ্বাস যা নোকিয়াকে বিশ্বে সর্বাধিক বিক্রিত মোবাইল কোম্পানির তকমা এনে দেয়।
এখন কিন্তু ছবিটা অনেকটাই আলাদা। আগে নোকিয়ার নিজস্ব ফ্যাক্টরি থেকে ফোন তৈরি হতো। মাইক্রোসফট নোকিয়াকে কিনে নেওয়া ও তারপর মাইক্রোসফট লুমিয়া সিরিজ এর ভরাডুবি হলে ২০১৬ সালে মাইক্রোসফট-এর থেকে নোকিয়া ফোন তৈরির যাবতীয় সত্ত্ব কিনে নেয় এইচ এম ডি গ্লোবাল নামক একটি সংস্হা, যেটির প্রতিষ্ঠাতা নোকিয়ার প্রাক্তন কর্মীরা। ফিরে আসার গল্প শুরু এখান থেকেই। ফোন তৈরি ও আসেম্বল করার বরাত পায় ফক্সকন নামক সংস্থা। আর ডিজাইন ও বিভিন্ন সফ্টওয়ার পেটেন্ট এর রয়্যালটি র থেকে রোজগার করবে ভূতপূর্ব নোকিয়া সংস্থা। যারা জানেন না তাদের জন্য বলে রাখি যে এই ফক্সকন ই অ্যাপেলের আইফোন আসেম্বল করে থাকে। সুতরাং ভালো বিল্ড কোয়ালিটির ট্র্যাডিশন যে নোকিয়া বজায় রাখতে পারবে সে আশা করাই যেতে পারে।
বিল্ড কোয়ালিটি নিয়ে কথা হচ্ছে আর নোকিয়া ৩৩১০ ২০১৭ এডিসন নিয়ে কথা হবে না তা কি হতে পারে?
চেহারার অনেকটা মেদ ঝরিয়ে নতুন রঙিন ডিসপ্লে ও ক্যামেরার নিয়ে হাজির নোকিয়া ৩৩১০ ২ ০১৭ এর নতুন সংস্করণ। আগের থেকে স্লিম হলেও ফোনটা আগের মতোই শক্তপোক্ত। সংস্থার তরফ থেকে জানানো হয়েছে যে এই ফোনে ইন্টারনেট কংনেক্টিভিটি থাকবে না। তবে থাকবে একসময়কার সবার প্রিয় “স্নেক” গেম। পাশাপাশি থাকছে মিউজিক প্লেব্যাক -এর সুবিধাও। স্মার্টফোন ব্যবহারকারীদের ব্যাটারি সমস্যাকে সামাল দিতে সেকেন্ডারি ফোন হিসেবে ব্যবহার হবে এই লক্ষ নিয়ে ফোনের ব্যাটারি লাইফ ও বাড়ানো হয়েছে।
তবে অনেকেই এই নোকিয়া ৩৩১০ -এর ২০১৭ সংস্করণ-এর যৌক্তিকতা বুঝতে পারছেন না। কারণ হলো হ্যান্ডসেটটার দাম। ভারতের বাজারে হ্যান্ডসেটটির দাম আনুমানিক ₹৩৫০০ হবে বলে মনে করা হচ্ছে, যা অনেকটাই বেশি। কারণ বর্তমানে এই দামে কমদামি ফোর-জি ভোলটিই(4G VoLTE) হয়ে যায় যা দৈনিক সাধারণ ব্যবহারের জন্য যথেষ্ট। বিশেষজ্ঞমহলের একাংশের মত, নোকিয়া এক্স নামক এন্ড্রয়েড সিরিজ-এর ব্যর্থতা ঢেকে বাজার ধরতেই একসময়ের বিশ্বের সর্বাধিক বিক্রিত ফিচার ফোনকে আবার ফিরিয়ে আনা হচ্ছে। অনেকের মতে আবার এই মরিয়া প্রয়াস সংস্থার বর্তমান ব্র্যান্ড ভ্যালুকে মেপে নেওয়ার একটা প্রচেষ্টা মাত্র। তবে দ্রুত নতুন করে বাজার ধরা বা বিশ্বমানের গ্রাহক পরিষেবা দেওয়া এই ব্যাপারগুলি বেশ চ্যালেঞ্জিং হবে বলেই মনে করা হচ্ছে সংস্থার পক্ষ থেকে।
(ক্রমশ)
পরবর্তী কিস্তি পড়ার জন্য় এখানে click করুন।