সম্প্রতি Vivo তাদের নতুন V11 Pro স্মার্টফোন ভারতের বাজারে এনেছে। দাম মাত্র ₹25990। যখন স্মার্টফোন ব্র্যান্ডগুলোর মধ্যে এখন প্রতিযোগিতা কম দামে ফ্ল্যাগশিপ এক্সপেরিয়েন্স করানোর, সেখান এত দামে এই Vivo V11 Pro স্মার্টফোন নেওয়াটা কি সত্যিই যুক্তিসঙ্গত? জানতে হলে পড়তে থাকুন।
নতুন ধরণের ওয়াটার-ড্রপ নচ্-এর সাথে 6.41 ইঞ্চির Full HD+ রেসলিউশনের Super AMOLED ডিসপ্লে দেখতে দারুন লাগে। কিন্তু এত সুন্দর ডিসপ্লের যদি কোনো গ্লাস প্রোটেকশন না থাকে তাহলে সেটা একদমই মেনে নেওয়া যায় না।
ফোনের ফিউচার রেডি ইন-ডিসপ্লে ফিঙ্গারপ্রিন্ট স্ক্যানার সবসময় ঠিকমতো ফিঙ্গারপ্রিন্ট স্ক্যান করতে পারে না, ডিসপ্লের নীচে যেখানে স্ক্যানারটা রয়েছে সেখানে বেশ ভালো রকম চাপ দিতে হয় ফিঙ্গারপ্রিন্ট স্ক্যান করানোর জন্য। তারপরেও শতকরা 80 ভাগ এটা ঠিকঠাক কাজ করে। যেহেতু ফোনের কোনো নিজস্ব ডিসপ্লে প্রোটেকশন নেই, সেক্ষেত্রে ফোনের উপর কোনো টেম্পার্ড গ্লাস প্রোটেক্টর লাগানোর পর ফিঙ্গারপ্রিন্ট স্ক্যানার কেমন কাজ করবে তা নিয়ে সন্দেহ থেকেই যায়।
ফোনটা দেখে গ্লাস ব্যাক ডিজাইনের মনে হলেও আদতে তা প্লাস্টিকের আর সহজেই এতে স্ক্র্যাচ পড়তে পারে। তাই কোম্পানি ফোনের সামনের আর পেছনের দু’দিকেরই স্ক্রিনগার্ড ফোনের বক্স-এ দিয়েছে।
ফোনটাকে চালাচ্ছে Snapdragon 660 প্রসেসর। যেখানে এই ফোনের থেকে ₹5000-6000 কম দামে honor play বা Poco f1-এর মতো স্মার্টফোনে kirin 970 বা Snapdragon 845 ফ্ল্যাগশিপ প্রসেসর পাওয়া যাচ্ছে সেখানে এতগুলো টাকা এই ফোনের পেছনে খরচ করার কোনো মানে হয় না।
পাশাপাশি এই Vivo V11 Pro ফোনে 64 জিবির eMMC 5.1 স্টোরেজ রয়েছে যা অনেকটাই পুরোনো প্রযুক্তির। এই রেঞ্জের বেশিরভাগ স্মার্টফোনেই বর্তমানে UFS 2.1 প্রযুক্তির স্টোরেজ রয়েছে যা eMMC স্টোরেজের চাইতে 5 গুন দ্রুততর। এমনকি ₹16999 দামের MiA2 স্মার্টফোনেও Snapdragon 660 প্রসেসর আর 64 জিবির UFS 2.1 স্টোরেজ রয়েছে। MiA2 স্মার্টফোনের ক্যামেরা পারফরম্যান্স প্রায় Vivo V11 Pro স্মার্টফোনের মতোই, কিন্তু গেমিং পারফরম্যান্স বা যেকোনো অ্যাপ ওপেনিং এর দিক থেকে এটা vivo V11 Pro-র থেকে অনেকটাই দ্রুততর।
এই ফোনে চার্জিং আর ডেটা ট্রান্সফার-এর জন্য রয়েছে মাইক্রোUSB পোর্ট যা এই বাজেটের ফোনে মোটেই কাম্য নয়। এই বাজেটের বেশিরভাগ ফোনেই আর এমনকি কমদামি MiA2 স্মার্টফোনেও USB টাইপ-C পোর্ট দেখতে পাওয়া যায় যেটা মাইক্রোUSB-র থেকে উন্নত আর আধুনিক প্রযুক্তির।
আর আপনি যদি অনলাইন স্ট্রিমিং সার্ভিস যেমন Netflix, Amazon Prime Video বা Hotstar ব্যবহার করে থাকেন তাহলে আপনি এই ফোনে ওয়েব কন্টেন্টগুলো HD বা Full HD রেসলিউশনে দেখতে পাবেন না, পরিবর্তে 540p তে দেখতে পাবেন যা দেখতে খুব একটা ভালো লাগবে না। কারণ এই ফোনে গুগল-এর Wildvine DRM এর সাপোর্ট নেই। তবে vivo চাইলেই OTA আপডেটের মাধ্যমে এটা ঠিক করতে পারে।
সবশেষে যেটা বলার সেটা হলো এই ফোনে রয়েছে LTE Cat 6 মোডেম যা অনেকটাই পুরোনো প্রযুক্তির, যার জন্য ফোনের নেটওয়ার্ক রিসেপশনও বেশ খারাপ। সেখানে কম দামী Poco f1 স্মার্টফোনে LTE Cat 16 আর এই vivo V11 Pro ফোনের থেকে মাত্র ₹3000 এর বেশি দামের Asus Zenfone 5Z স্মার্টফোনে অত্যাধুনিক LTE Cat 18 মোডেম থাকার জন্য এই স্মার্টফোনগুলোর নেটওয়ার্ক রিসেপশন খুবই ভালো।
চকচক করলেই যেমন সবকিছু সোনা হয় না, তেমনই শুধুমাত্র ভালো সেলফি তোলা আর স্টাইলিশ দেখতে হওয়ার জন্য কোনো ফোন নেওয়া যায় না, যেখানে এই Vivo V11 Pro এর চেয়ে ₹5000-6000 কমে আপনার হাতে honor play বা Poco f1 স্মার্টফোন-এর মত অপশন রয়েছে। আর আপনি যদি আরো ₹3000 টাকা খরচা করার কথা ভাবেন তবে পেয়ে যেতে পারেন Asus-এর ফ্ল্যাগশিপ স্মার্টফোন Zenfone 5Z। সাধ্যের মধ্যে যেখানে আপনি ফ্ল্যাগশিপ এক্সপিরিয়েন্স পেতে পারেন, সেখানে Vivo V11 Pro-এর মত সাদামাটা ফোন নিয়ে আপস করার সত্যিই কি কোনো মানে আছে? নিজেরাই বিচার করুন।